অপ্রকাশিত ভালবাসা গল্প ও কাহিনী

লেখক: মাহমুদ হাসান রানা


দীর্ঘ ৬ বছর পর টুম্পার মেসেজ পেয়ে
চমকে ওঠে শুভ্র। অবাক কান্ড, শুভ্রর এই
নাম্বারটা তো ফ্যামিলির সবাই
ছাড়া আর কেউ জানেনা! বাট টুম্পা
পেল কিভাবে নাম্বারটা! মনে
মনে ভাবে ও!
"শুভ্র, কেমন আছো? জানি অনেক
ভালো আছো।বাট আমি ভালো
নেই।কি করে থাকি বলো? তুমি
ছাড়া কি ভালো থাকা যায়!
জানি তোমার মনে একটায় প্রশ্ন
ঘোরপাক খাচ্ছে যে কি করে
তোমার নাম্বারটা পেলাম!
তোমার বোন শুভ্রার কাছ থেকে বহু
কষ্ট করে নিয়েছি।দিতেই চাইছিল
না! অনেকটা হাতে পায়ে ধরেই
নিয়েছি। জানো তোমার সাথে
ফোনে কথা বলাটা খুব জরুরি!
জানো আমি এল.এল.বি কমপ্লিট
করেছি! এই ৬ বছরে অনেক পরিবর্তন
এসেছে আমার জীবনে। আমি আর
অপেক্ষা করতে পারবোনা।প্লিজ
রাত ১১ টায় ফোন দিবো।রিসিভ
করিও! নাও বাই!!!!!!
(টুম্পা) "
মেসেজটা পড়ে কান্না থামাতে
পারলোনা শুভ্র! সবকিছু ওর কাছে
স্বপ্নের মত লাগছে।ও ভাবতে
পারছেনা টুম্পা ওকে মেসেজ
দিয়েছে, কথা বলতে চাইছে! যে
মেয়েটার জন্য সে তার সবকিছু
জলাঞ্জলি দিয়েছে সে মেয়েটাই
আজ আবার ফিরে এসেছে।
এইতো ৬ বছর আগের কথা।এইচ.এস.সি
পরীক্ষার্থী ছিল শুভ্র।আর টুম্পা ছিল
ইন্টার ১ম বর্ষের ছাত্রী। একই কলেজে
পড়তো।অথচো অকজন অন্যজনকে
চিনতোনা।পরিচয়টা হয়
আকস্মিকভাবে। শুভ্রর বিদায়
অনুষ্ঠানে। উপস্হাপনার দায়িত্বে
ছিল টুম্পা। শুভ্র অবাক হয় টুম্পাকে
দেখে। এতো সুন্দর কন্ঠ কারো হয়
কিভাবে! শুভ্র হল রুমের অনেক
পিছনে ছিলো বলে মেয়েটাকে
দেখতে পায়নি।জাস্ট ওর উপস্হাপনা
শুনছিলো! হঠাৎ করে উপস্হাপিকার
কন্ঠে নিজের নাম শুনে অবাক হলো
সে! ওর যে বিদায়ী
ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে বক্তব্য দেয়ার
কথা ছিল মনেই ছিলনা। আর কিছু না
ভেবে চলে গেল মঞ্চের দিকে।।
তখনই ফাস্ট ও টুম্পাকে দেখে।না
মেয়েটার কন্ঠের মত চেহারাটাও
অনেক সুন্দর।হরিণের মত টানাটানা
চোখ, রেশমি কালো চুল, চুলের
খোপায় একটা লাল গোলাপ! সব
মিলিয়ে মেয়েটাকে দারুণ
লাগছে! এককথায় শুভ্র স্বপ্নে যে
মেয়েটাকে দেখতো, মেয়েটা
যেন সেই!!!!! কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে
তাকিয়ে ছিল মেয়েটার দিকে।
বক্তব্য দেয়াতে কলেজে ওর সুনাম
ছিল! কলেজের সব অনুষ্ঠানের
উপস্হাপনা শুভ্রই করতো! কিন্তু আজ ও
কিছুই বলতে পারছেনা।স্পীকার টা
হাতে নিয়ে আমতা আমতা করছে!
কথা যেন আটকে যাচ্ছিল। সবাই
অবাক হয়ে গেল! যে ছেলে নিজে
লিখেই বক্তব্য দিত,তার মুখে আজ
তোতলামির আভাস!!!!!! যাইহোক,
বেশি কিছু বলতে পারলোনা
বক্তৃতায়!!
.
.
.
শুভ্র কলেজ ক্যাম্পাসে মেয়েটাকে
তন্ন তন্ন করে খুঁজলো! বাট পেলনা!
সি.এন.জি তে উঠতে যাবে তখনই
মেয়েটাকে দেখলে ও।মেয়েটা
সি.এন.জি টাতেই বসে আছে।শুভ্র
মুচকি একটা হাসি দিলো।
-এক্সকিউস মি!
-জ্বী!
-কোথায় যাবেন?
-বাসায়!
-থাকেন কই?
-দোভাষী বাজার!
-আমি রাইখালী বাজারে থাকি!
কর্ণফুলী নদীর ওপারে!
-ও!
-একটা কথা বলবো?
-বলুন!
-আপনার ফোন নাম্বারটা দেয়া
যাবে? আমিতো আর কলেজে
আসবোনা।তাই ভাবছি.....
-আমি শুধু শুধু আপনাকে আমার
মোবাইল নাম্বার দিবো কেন?
-না মানে.....
-আমার বাসা চলে এসেছে আমি
নামবো!
-শুনুন!
-আমাকে নামিয়ে দিন!
(ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে)
শুভ্র বাসায় চলে এসেছে নদী পার
হয়ে। ক্লান্ত লাগছে বড্ড।কিন্তু এতো
কিছুর মধ্যেও সেই মায়াভরা হাসি,
রেশমি কালো চুল, টানাটানা চোখ
দুটোকে ভুলতে পারছেনা ও! চেখের
সামনে ভাসছে এখনএ।শুভ্র কখনও
ভাবেনি কোনদিন ও কারো প্রেমে
পড়বে! তাই বলে প্রথম দেখাতেই!!
না, শুভ্রর আর মন মানছেনা।মেয়েটার
ব্যাপারে সব জানা চায়! বেশি
কিছু না ভেবেই ফোন দিল ওর বেষ্ট
ফ্রেন্ডকে।
-জুয়েল, ভাই আমাকে একটা হেল্প কর
না ভাই।
-বল,কাউকে বলবিনা?
-আরে বলবোনা! কথা দিলাম!
-আজ যে মেয়েটা আমাদের
বিদায়নুষ্ঠানে উপস্হাপনা করেছে
সে কে???
-কেন মামা??? প্রেমে পড়েছিস
নাকি???
-ভাই বলনা।তোকে সব কথা
সাক্ষাতে বলবো।
-মেয়েটার নাম টুম্পা! ফাস্ট ইয়ারে
পড়ে,কমার্সে!!
-ভাই,,,, যে করেই হোক ওর নাম্বারটা
যোগাড় করে দে ভাই!!
-কি???? ও কোন ছেলের সাথে কথা
বলেনা।তাছাড়া ওর নাম্বার আমার
কাছে নেই।
-প্লিজ,একটু দেখনা।যে করেই হোক ওর
নাম্বারটা চাই আমি!
-আচ্ছা বিকালে আমার বাসায়
আসিস।দেখি কি করতে পারি!
-এই জন্যই তোকে এতো ভালোবাসি
আমি। লাভ ইউ দোস্ত!
-লাভ ইউ টু!
.
.
.
বিকালে শুভ্র জুয়েলদের বাসায়
গেল।জুয়েল ওর রুমে ছিলো।
-তো মামা তাহলে শেষ পর্যন্ত
প্রেমে পড়লি?
-আসলে আমি জানতাম না ওর
ব্যাপারে।বাট আজ সব এলেমেলো
হয়ে গেল আমার! প্রথমে কন্ঠ শুনলাম,
তারপর সরাসরি দেখলাম!
তারপর........!! !!
-হয়েছে আর বলতে হবেনা।বুঝেছি
সব। নাম্বার পাইনি ওর কিন্তু ফেসবুক
আইডিটা জোগাড় করেছি অনেক
কষ্টে!
-আইডিটা বল?
-wondergirl tusi!
-থ্যাংকস দোস্ত! তোর এই উপকারের
কথা আমি কখনো ভুলবোনা।
-এভাবে বলছিস কেন?
-আচ্ছা আজ আমি আসি। ভাল থাকিস।
-ওকে।
রাতে শুভ্র ঐ আইডিটা রিকোয়েষ্ট
পাঠায়। সাথে একটা মেসেজ।
প্রোফাইলে শুভ্রের ছবি দেয়া ছিল।
তাই টুম্পার কোন অসুবিধা হলোনা
শুভ্রকে চিনতে।রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট
করল টুম্পা।সেদিন টুম্পাকে
অনলাইনে পেয়েও মেসেজ দেয়নি
শুভ্র।আবার যদি ব্লক দিয়ে দেয় এই
ভেবে।পরেরদিন টুম্পাকে নিজ
থেকে মেসেজ দেয় শুভ্র।প্রথমদিনে ই
সব কথা বলে দেয় ও।টুম্পাকে যে ওর
ভালোলাগে।প্রথম দেখাতেই
ভালোবেসে ফেলে, এসব কথা।টুম্পা
ওর কথায় অবাক হলেও রাগ করেনি আর
ব্লকও দেয়নি।এভাবে
প্রতিদিন,প্রতির াত চলতে থাকে
ওদের চ্যাট।
.
.
.
৪ মাস পর......
আজ শুভ্রর এইচ.এস.সি ফাইনাল
পরীক্ষার ফলাফল দিয়েছে। তেমন
ভালো করতে পারেনি শুভ্র। ভালো
করবেই বা কি করে।সারাদিন শুধু
টুম্পার কথা ভাবতো।পড়ালেখা
মনোযোগ দিয়ে করতে পারতোনা।
টুম্পা ওর ভালোবাসার ডাকে
সাড়া দেয়নি তখনও। কিন্তু টুম্পা সব
খবর রাখতো শুভ্রর সম্পর্কে! ওর
ব্যাপারে সব পজেটিব জেনেও
শুভ্রকে মেনে নেয়নি ও।এদিকে শুভ্রর
ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষার আর
বেশি দিন বাকি নেই।ও পড়তেও
পারছেনা ঠিকমতো।সারাদিন
চিন্তা করতো টুম্পাকে নিয়ে।
অনেক অনেক স্বপ্ন দেখতো টুম্পাকে
নিয়ে।ফ্যামিলিতে সবার বড় ও।
বোনসহ ৪ সদস্যবিশিষ্ট ফ্যামিলি।
কারো কথা ভাবেনি শুভ্র।দিনরাত
শুধু টুম্পাকে ভেবেছে। দেখতে
দেখতে ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষা
হয়ে গেল।রেজাল্টও বের হলো।কিন্তু
কোথাও চান্স পাইনি শুভ্র।টুম্পাও ওর
ভালোবাসি,ভালোবা সি কথাটা
শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে ওকে ব্লক
দিয়ে দিল।শুভ্র খুব ইচ্ছে ছিল কোন
পাবলিব ভার্সিটিতে ইংলিশ
নিয়ে পড়ার! কিন্তু হলোনা সেটা।
এর মধ্যে শুভ্রর বাবা হঠাৎ মারা গেল।
তাই পরিবারের ভারণপোষণের
দায়িত্ব পরল ওর কাধে!! তাই
পড়ালেখা করা হলোনা ওর।
.
.
.
এর পর কেটে গেল ৬ টি বছর।অনেক কষ্ট
করেছে শুভ্র এতগুলো বছর।ছোট একটা
ব্যবসা দিয়ে শুরু করেছিল।এখন ব্যবসার
আয়তন বৃদ্ধি পেয়েছে।ছোট বোনের
বিয়ে দিয়েছে দেখে শুনে।
ছেলেটা অনেক ভালো।শুভ্রার
সাথে রিলেশান ছিল।ছেলে
ভালো। তাই আর অমত করেনি শুভ্র।
এতদিনেও টুম্পাকে ভুলেনি শুভ্র।
একতরফা ভালোবেসেছিল।যোগ
াযোগের অনেক চেষ্টা করেছিল ও।
কিন্তু কোনভাবে টুম্পার কোন খবর
নিতে পারেনি।
.
.
.
এতোগুলো বছর যে মেয়েটাকে
একতরফা ভালোবেসেছে, সে টুম্পা
আজ ওকে মেসেজ দিয়েছে।
অতীতের কথা গুলো ভাবছিলো শুভ্র
আর কাঁদছিল।যখন টুম্পার মেসেজটা
পেয়েছে তখন থেকেই এসব ভাবছিল
শুভ্র।সারাদিন কিছুই খায়নি।শুধু নীরব
অশ্রু বিসর্জন দিয়েছে। এসব ভাবতে
ভাবতে কখন যে রাত ১১ টা বেজে
গেল বুঝতেই পারেনি!!!!!!!!! !! একটা
ফোন কলের শব্দে ওর কল্পনায় ছেদ
পড়ল।নাম্বারটা টুম্পার।সেভ করা
ছিল।
-হ্যালো, শুনছো?
-জ্বী,বলেন!!
-আপনি করে বলছো কেন?
-তো কি বলে ডাকবো?
-তুমি!
-কোন অধিকারে?
-জানি, আমার উপর তোমার অনেক
রাগ।তোমাকে আমার অনেক কিছু
বলার আছে।সব কথা ফোনে বলা সম্ভব
না।কাল চকবাজারে চলে এসো।
আমি অপেক্ষা করবো তোমার জন্য।
আমি বহাদ্দারহাট থাকি!!!!
-আচ্ছা, চেষ্টা করবো।
-চেষ্টা না!! আসতেই হবে! তুমি
আসবা!!!
-আচ্ছা, ঠিক আছে আসবো!!!!!
.
.
.
পরদিন.......
টুম্পা আধঘন্টা ধরে চকবাজার গুলজার
টাওয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে!
শুভ্র এখনও আসেনি।একটু পর স্যুট,বুট আর
টাই পড়া এক সুদর্শন পুরুষ গুলজার
টাওয়ারের নিচে আসলো! টুম্পা
ভাবছে এই হয়তো শুভ্র। দুজন দুজনকে
চেনেনা!!! বহুবছর আগের চেহারার
সাথে আজকের চেহারা
মিলবেনা!! আর না মিলাটায়
স্বাভাবিক! টুম্পা ভ্যানিটি ব্যাগ
থেকে মোবাইল বের করে শুভ্রকে
ফোন দেয়।রিসিভ করে ঐ
ছেলেটায়!!!!!! টুম্পার আর কোন সন্দেহ
নেই যে ও শুভ্র!!!!
.
.
.
টুম্পা দৌঁড়ে গিয়ে ছেলেটাকে
জড়িয়ে ধরে। মানে শুভ্রকে!!!!!! শুভ্রর
বুঝতে বাকি রইলোনা যে মেয়েটা
টুম্পা!!!!!!!! কারণ অন্য কোন মেয়েকে
যে শুভ্র চেনেনা!! শুভ্রর জীবনে
একটায় মেয়ের অস্হিত্ব!!! সে
টুম্পা!!!!!!!!! !!!!! দুজনের চোখেই জল!!!
টুম্পার এই ব্যবহার শুভ্রকে মোটেও
অবাক করেনি।কারণ সে জানে
টুম্পাও আজ ওকে ভালোবাসে! এতটুকু
না বোঝার মত বোকা সে নয়!!!!!!
.
.
.
গুলজার টাওয়ারের সামনের উৎসুক
জনতা এই দৃশ্যটা দেখছে আর নানারকম
মন্তব্য করছে!! তাতে টুম্পা আর শুভ্রর
কিছু যায় আসেনা!!! ৬ বছরের জমানো
ভালোবাসার কাছে এসব তুচ্ছ,
নগন্য!!!!!!!!!! !!
(সমাপ্ত)

Comments

Popular posts from this blog

গল্পঃ ম্যাডাম যখন Raj এর বউ