"না বলা ভালোবাসা

পাঠ ১

আজ আমার বিয়ে। আসলে আমার দাদু-দাদীজানের বয়স অনেক হয়েছে। তাদের ইচ্ছে, তারা তাদের নাত-বউকে দেখে মারা যাবে। তাই আব্বু, উনার খুব কাছের বন্ধু শফিক আংকেলের মেয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। উনাদের বাসা পুরান ঢাকা। আর আমার যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে তার নাম, "রুকু"। তবে একটা সম্যসা আছে। তারা দুজনেই জমজ বোন। ওদের নাম রুকু-রুমু। আমি চিনতেই পারি না একদম। তো যায় হোক, আমাদের ঠাকুরগাঁও থেকে পুরান ঢাকা যেতে সময় প্রায় ১ দিন লাগে। কারণ ঢাকায় যে জ্যাম। সবাই কি ব্যস্ত......!!! কেউ রেডি হচ্ছে, কেউ বাসা সাজাতে ব্যস্ত। কমবেশি সবাই খুব ব্যস্ত। আর আমি মনে মনে একজন কে খুঁজতেছি। কারণ ওকে ছাড়া আমার একা একা রেডি হতে সমস্যা হচ্ছে। পাঞ্জাবীটার হাতার বোতাম গুলো লাগাতে পারতেছি না। তবুও আমি তাকে খুজতে বের হলাম। জানালায় গিয়ে দেখি.... ও আমার বাসর ঘরের ফুল গুলো ধরে ধরে কান্না করতেছে। সরি, এতক্ষণ ধরে যার নাম বলতেছি, তার নাম তুবা। তো আমি দরজায় গিয়ে থমকে দাঁড়ালাম। তাঁকে বুঝতে দিলাম না যে, ওর কান্না আমি দেখে ফেলেছি। পেছন থেকে ডাকলাম, ও চোখগুলো মুছে আমার দিকে ফিরে তাঁকায়। ------- ------- ------- আমি:-ভাবতেই অবাক লাগতেছে, আমার আজ বিয়ে হচ্ছে। তুবা:-তো, মানুষের বুঝি বিয়ে হয় না। আমি:-হয়, কিন্তু আজকে রাতে এই বাসর ঘরে অন্য কারো থাকার কথা ছিল। তুবা:-একটু পরে আপনার বিয়ে হতে যাচ্ছে, আর আপনি এখনো কি উল্টা- পাল্টা বলতেছেন। আমি:- Oooo sorry.জানো.......একটা সত্য কথা কি? তুবা:- না জানালে জানবো কেমনে? আমি:- আজ আমি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ ভুল করতে যাচ্ছি। তুবা:-কেন? আমি:- আমি একটি মেয়েকে খুবই ভালোবাসি, সেই কিশোর বয়স থেকে। তুবা:-আমাকে কি বলা যাবে, কে সে ভাগ্যবতী? আমি:-আমার বাসার ঘরের ফুলগুলো ধরে একটু আগে যে কান্না করতেছিল। তুবা:-একটু পরে আপনার বিয়ে। আর আপনি তো সেই মেয়েকে কিছুই বলেন নি।সেই কবে মানে আমি যখন ক্লাস ফোরে আপনার কাছে পড়েছিলাম তখন একবার বলেছিলেন, "আমি তোমাকে বিয়ে করবো"।কিন্তু এরপর অনেকগুলো বছর চলে গেল, একটা দিনের জন্যও তো কিছুই বলেন নি। আমি:- আসলে সাহস পাইনি,কারণ তুমি তখনই এই কথা শুনলে কেঁদে ফেলতে, আর এখন বড় হয়েছো, না জানি কাকে বিচার দিয়ে বসবে। তুবা:- আপনার মাথা, আমি সেই ছোট থেকে বড় হয়েছি শুধু আপনাকে আমার বর ভেবে। যখনি কেউ জানতে চেয়েছে, তোমার কেমন ছেলে পছন্দ,আমি আপনার বর্নণা দিতাম। আমি:-ওকে, পরে কথা হবে, বাইরে মা ডাকতেছে....... তুবা:-ওকে যাও। ----- ----- তুবার চোখগুলো ছলবল করে আবার উঠলো, আমি বাইরে চলে আসলাম। এরপর সবাই রেডি হয়ে......... ঢাকার দিকে রওনা দিলাম। গাড়িতে দেখি..... আমার পাশের সিটে তুবা বসে আছে। মেয়েটা আমাকে কানে কানে...... বলল..... এটাই আপনার সাথে, আমার কোথাও একসাথে শেষ যাওয়া। আমি থাকলে আপনার কোন সমস্যা হবে না তো....??? আমি:-কানের নিচে এমন দুইটা দিবো....তো একদম ঠিক করে দিবো। ----- ----- এভাবে বরযাত্রী এগিয়ে চলছে বিয়ের দিকে। অনেক কথার পর দেখি..... আমি ঘুমের ঘোরে তার কাঁধে মাথা রেখেছি........ আর তুবা আমার ডান হাতটি ধরে আছে.........!!! চোখ খুলে দেখি...... তুবা আমার চুলে বিলি কেঁটে দিচ্ছে, আর অঝোরে দু চোখ বেয়ে কান্না করতেছে.............!!!

Comments

Popular posts from this blog

গল্পঃ ম্যাডাম যখন Raj এর বউ

অপ্রকাশিত ভালবাসা গল্প ও কাহিনী